বর্তমান যুগের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তির একটি আধুনিক মোবাইল ফোন। প্রতি সপ্তাহেই নতুন প্রযুক্তিনির্ভর বিভিন্ন সুবিধার স্মার্টফোন বাজারে আসছে। দিনে কয়েক ডজন ছবি তোলা, সেকেন্ডের মধ্যে পৃথিবীর অন্য প্রান্তে ভিডিও কল করা বা নিমেষেই জটিল সব তথ্য খুঁজে বের করার মতো কাজ করতে বেশ কার্যকর স্মার্টফোনগুলো। আমাদের হাতের মুঠোয় থাকা স্মার্টফোন আসলে কতটা শক্তিশালী, তা অনেকেই জানেন না।
আধুনিক স্মার্টফোন কতটা শক্তিশালী, তা কল্পনা করতে আমরা অ্যাপোলো ১১ মহাকাশযানের তথ্য আলোচনা করতে পারি। ১৯৬৯ সালে মানুষ মহাকাশযানটির মাধ্যমে প্রথম চাঁদে অবতরণ করে। সেই ঐতিহাসিক কাজটি সফল করার মূল কান্ডারি ছিল অ্যাপোলো গাইডেন্স কম্পিউটার বা এজিসি। এই কম্পিউটারটির হার্ডওয়্যার ছিল তৎকালীন সময়ের সেরা প্রযুক্তি। অ্যাপোলো গাইডেন্স কম্পিউটারের প্রসেসিং গতি ছিল ০.০৪৩ মেগাহার্টজ, যেখানে আধুনিক স্মার্টফোনের গতি প্রায় ৩.০ গিগাহার্টজ। অ্যাপোলো গাইডেন্স কম্পিউটারের র্যাম ছিল ৪ কিলোবাইট আর এখনকার যেকোনো স্মার্টফোনের র্যাম ৮ গিগাবাইট বা তার বেশি হয়ে থাকে। অ্যাপোলো গাইডেন্স কম্পিউটারের স্টোরেজ সক্ষমতা ছিল মাত্র ৭২ কিলোবাইট, আর বর্তমানে অনেক স্মার্টফোনেই ২৫৬ গিগাবাইট থেকে শুরু করে ৫০০ গিগাবাইট দেখা যায়। দুটি প্রযুক্তির তুলনার মাধ্যমে বোঝা যায় স্মার্টফোন অ্যাপোলো গাইডেন্স কম্পিউটারের চেয়ে গড়ে কয়েক লাখ গুণ দ্রুত এবং শক্তিশালী।
অ্যাপোলো ১১ মহাকাশযানের কম্পিউটারকে যা করতে কয়েক মিনিট বা ঘণ্টা সময় লাগত, তা আমাদের স্মার্টফোন চোখের পলকে করে ফেলতে পারে। অ্যাপোলো গাইডেন্স কম্পিউটার তৈরি হয়েছিল শুধু একটি নির্দিষ্ট কাজের জন্য। জটিল নেভিগেশনের তথ্য গণনা করতে পারদর্শী ছিল অ্যাপোলো গাইডেন্স কম্পিউটার। আজকের স্মার্টফোন একই সময়ে হাজার হাজার অ্যাপ্লিকেশন পরিচালনা করতে সক্ষম।
স্মার্টফোন বর্তমানে মানুষের জীবনযাত্রার ধরনকে বদলে দিয়েছে। নব্বইয়ের দশকে একটি সাদামাটা ছবি তোলার জন্য আমাদের স্টুডিওতে যেতে হতো বা ফিল্ম রোলের জন্য অপেক্ষা করতে হতো। এখন আপনার স্মার্টফোনটি মুহূর্তে ফোরকে ভিডিও রেকর্ড করতে পারে। ভিডিও সম্পাদনার আগে বিশেষ স্টুডিওর মাধ্যমে করতে হলেও বর্তমানে শতাধিক অ্যাপ আছে, যা দিয়ে সহজেই ভিডিও সম্পাদনা করা যায়।
বর্তমানে আধুনিক সব স্মার্টফোনে সহজেই জিপিএস ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা–নির্ভর বিভিন্ন সুবিধা ব্যবহার করা যায়। আধুনিক স্মার্টফোনের সক্ষমতার বিষয়ে ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক বুশরা হুমায়রা বলেন, ‘এখন স্মার্টফোন কেবল ছবি তোলা নয়, বরং ছবি বোঝা ও উন্নত করার কাজও করে। প্রযুক্তির দ্রুত অগ্রগতির কারণে স্মার্টফোন একটি ব্যক্তিগত সুপারকম্পিউটার হিসেবে কাজ করছে। স্মার্টফোন এখন আর কেবল একটি যোগাযোগের মাধ্যম নয়, এটি আমাদের ব্যক্তিগত তথ্যভান্ডার, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার গেটওয়ে এবং ডিজিটাল জীবনের কেন্দ্রবিন্দু।